ইয়েমেন উপকূলে নৌকা ডুবে ৬৮ জনের মৃত্যু
ঢাকা মর্নিং আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইয়েমেন উপকূলে শরণার্থী ও অভিবাসীবোঝাই একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রায় ১৫০ অভিবাসী বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ইয়েমেন প্রধান বলেছেন, ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
নৌকাটি ইয়েমেনের দক্ষিণের আবিয়ান প্রদেশ উপকূলে ডুবে যায়। ৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে আইওএম।
আইওএম জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় আবিয়ান প্রদেশের শাকরা উপকূলে আরব সাগরে প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে নৌকাটি উল্টে যায়। নিহতদের বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার নাগরিক।
আইওএম ইয়েমেন প্রধান আব্দুসাত্তোর এসোয়েভ জানান, প্রায় ১৫৭ জন অভিবাসীকে বহনকারী নৌকাটি বিপজ্জনক একটি রুটে যাত্রা করছিল, যেটি সাধারণত মানবপাচারকারীরা ব্যবহার করে থাকে।
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল থেকে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোতে কাজের সন্ধানে যাত্রা করা অভিবাসীদের জন্য ইয়েমেন এখনও একটি প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আইওএম-এর হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শত শত মানুষ এই রুটে নৌকাডুবিতে নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন।
ভবিষ্যতের উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় উত্তর দিকে সৌদি আরবগামী অসংখ্য হতাশাগ্রস্ত অভিবাসীর জন্য ইয়েমেন একটি জনপ্রিয় ট্রানজিট দেশ।
এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, দক্ষিণের খানফার জেলায় ৫৪টি মৃতদেহ উপকূলে পাওয়া যায়, এবং আরও ১৪টি মৃতদেহ আবিয়ান প্রাদেশিক রাজধানী জিনজিবারের একটি হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
আবিয়ান নিরাপত্তা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং বহু মৃতদেহ উপকূলজুড়ে বিস্তৃত এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
আইওএম-এর একজন মুখপাত্র বলেন, সংস্থাটি এই মর্মান্তিক প্রাণহানিতে গভীরভাবে শোকাহত।
তিনি বলেন, ‘এই হৃদয়বিদারক ঘটনা এমন একটি বাস্তবতা তুলে ধরে যেখানে অভিবাসীরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করে, যা প্রায়শই কিছু লোভী পাচারকারীর মাধ্যমে পরিচালিত হয় যারা হতাশা ও দুর্বলতাকে পুঁজি করে তাদের শিকার করে।’
মি. এসোয়েভ বলেন, অভিবাসীদের পাচারকারীদের শিকার হওয়া ঠেকাতে আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ যেন আইনি পথে অভিবাসন করতে পারে এবং পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে এমন বিপজ্জনক যাত্রায় না নামে, সেজন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’
আইওএম পূর্বে আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত যাত্রাপথকে সবচেয়ে ব্যস্ত ও বিপজ্জনক মিশ্র অভিবাসন রুটগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছিল।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ইয়েমেনের ধুবাব জেলায় দুইটি নৌকা ১৮০ জনের বেশি অভিবাসী নিয়ে সমুদ্রে ডুবে যায়। সেসময় শুধু দুইজন নাবিককে উদ্ধার করা হয় এবং বাকি সব যাত্রী নিখোঁজ ও মৃত বলে ধারণা করা হয়।
আইওএম-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে অভিবাসন সেবাকেন্দ্রে পৌঁছানো অভিবাসীরা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ আবহাওয়ায় নৌকা পাঠাচ্ছে যাতে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়াতে পারে।
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেক অভিবাসী এখনো এই যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন।
২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালানো ইয়েমেনিদের সংখ্যা এই পথে হঠাৎ বেড়ে যায়। এছাড়া আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশ, বিশেষ করে সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া থেকে পালিয়ে আসা অনেকেই আশ্রয়ের সন্ধানে ইয়েমেনে যেতে চান। অনেকে ইয়েমেন হয়ে আরও উন্নত উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে যেতে চান।
গত এক দশকে আইওএম-এর ‘মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্টে’র তথ্য অনুযায়ী, এই রুটে ৩,৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ১,৪০০ জনের মৃত্যু ডুবে যাওয়ার কারণে হয়েছে।
